
নরওয়েতে দেখার মত দর্শনীয় ১০টি স্থান
নিশীথ সূর্যের দেশের নাম কি শুনেছেন? না জানলে ক্ষতি নেই, ইউরোপের জনপ্রিয় ট্রাভেল ডেস্টিনেশন নরওয়েকে বলা হয় নিশীথ সূর্যের দেশ।
অবকাশের আজকের ব্লগে সেই নরওয়ে ভ্রমণ নিয়েই বিস্তারিত জানাবো আপনাদের। নরওয়ে ভ্রমণে যে ১০টি শহর না ঘুরলেই নয় তার সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দিতে চেষ্টা করব।
১. বার্গেনঃ
উডেন সিটি বা কাঠের শহর বললে ভুল হবে না এই শহরকে। এই শহরের বেশির ভাগ স্থাপত্যই কাঠের। সত্যি বলে বিসশ্বের অন্যান্য সকল জায়গা থেকে এই জায়গা অবশ্যই ভিন্ন। ঐতিহাসিক ৬০টি ভবন সহ বিখ্যাত সাতটি পাহাড়ের সমাবেশ আছে এখানে। টাটকা সামুদ্রিক খাবারের সাথে বিখায় বেশ কিছু মিউজিয়াম আর ফটো স্টুডিও পাবেন এখানে ।
২. লফোটেনঃ
ছবির মত সুন্দর এই দ্বীপ কে বলা হয় পোষ না মানা দ্বীপ।এর কারণ হচ্ছে এই দ্বীপপুঞ্জ হচ্ছে প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি সরু লম্বা আকৃতির একটি দ্বীপপুঞ্জ যার এক প্রান্ত মূল ভূখণ্ডের সাথে সংযুক্ত। এর চারপাশে তাই সমুদ্র। এখানে মাছ ধরার জন্য বেশ খ্যাতি আছে। তাই যারা মাছ ধরতে পছন্দ করেন তাদের জন্য এই শহর হতে পারে বেশ পছন্দের একটি জায়গা। সরু এই দ্বীপ থেকে একবার সমুদ্র আর একবার ভূ-খন্ডে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আপনাকে অভিভূত করতে বাধ্য।
৩. ট্রমসোঃ
আর্কটিকের কথা শুনেছেন? এর মানে হলো মেরু অঞ্চল। মেরু অঞ্চলের সমস্ত সৌন্দর্য্য নিয়ে আছে ট্রমসো। এখানের ট্রমসাভায়া শহরের জন্যে এই অঞ্চল বিখ্যাত। এটিতে শহুরে ভাব থাকলেও মেরু অঞ্চলের সৌন্দর্য একইরকম আছে। পোলার সেন্টার আর পোলার মিউজিয়াম পাবেন এখানে। এর সাথে আছে ওয়্যার লিফটের সুযোগ। যার মাধ্যমে চমৎকার এডভেঞ্চারাস সময় কাটাতে পারবেন আপনি।
৪. ওসলোঃ
নরওয়ের রাজধানী ওসলো। সেরা কিছু খাবার ও রেস্তোরাঁর জন্য বিখ্যাত এই শহর। রাতে ঘোরার জন্য এই শহর বেশ নামকরা। বিভিন্ন জায়গায় গানের আয়োজন করা হয় বিনোদনের জন্য। সাইক্লিং বা পায়ে হেঁটেও এই শহরের ভ্রমণের স্বাদ নিতে পারেন। ওসলো তে পাবেন ভাইকিং মিউজিয়াম। এখানে প্রায় ১২০০ বছরের আগের ভাইকিং অভিযাত্রীদের ব্যবহৃত কাঠের নৌকা ও সরঞ্জাম সংরক্ষিত আছে। এই যাদুঘরে ভাইকিংদের বস্ত্র, সরঞ্জাম ও ব্যবহার্য সামগ্রী এবং তাদের সমাধিতে পাওয়া বিভিন্ন জিনিস সংরক্ষিত আছে যা আপনাকে সেই পুরনো যুগে নিয়ে যেতে বাধ্য করবে।
৫. গাইরেঞ্জারএফজোরডঃ
প্রকৃতির অন্যতম বিস্ময় গাইরেঞ্জারএফজোরড যা আপনাকে অন্যরকম ভাবে আকর্ষণ করবে। এটি ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং সুউচ্চ ও ঘন সবুজ পাহাড় দিয়ে ঘেরা। এখানে বিভিন্ন জলপ্রপাত আছে। এখানের পাহার গুলোর উচতা প্রায় ১০০০ মিটারের বেশি। হাইকিং করতে পারেন তবে তা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। ছবির মতো সুন্দর গ্রাম ও পাহাড় গুলো আপনাকে আকর্ষণ করবে অবশ্যই।
৬. ফ্লাম
ছোটবেলায় নানা রকম ভিউ কার্ডে সুন্দর ট্রেন যাওয়ার দৃশ্য দেখেছেন অনেকেই। ফ্লাম সেই কল্পনার সুন্দরের মতোই সুন্দর। নরওয়ের অরল্যান্ডসফিওর্ডের ছোট্ট গ্রাম ফ্লাম। মূলত ফাম অর্থ কাল্পনিক সুন্দর। তাই এই গ্রামের সৌন্দর্য উপভোগে ট্রেনে করে ঘুরে আসুন ফ্লাম।
৭. স্বালবার্ডঃ
একে বলা হয় মেরু ভাল্লুকের রাজ্য। পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর প্রাণি এটা তা জানেন ই। শ্বত ভাল্লুকের সাক্ষাতে যেতে হবে স্বালবার্ডে। নরওয়ের এই জায়গা মেরু ভল্লুক, তিমি, সিল, আর্কটিক শিয়াল, হরিণ ইত্যাদি দেখতে পারবেন। তবে এদের দেখতে অবশ্যই ট্যুর গাইড দরকার। এদেশের ট্যুর গাইড অনেক ফ্রেন্ডলি হয়ে থাকে। এ স্থানের একটি মজার তথ্য হলো এখানে মৃত দেহ কবর দেওয়া নিষেধ। কারণ এখানে এত কম তাপমাত্রা যে মৃতদেহে পচন ধরে না। এখানের লঙ্গইয়ারবিয়ান শহর টি ঘুরে আসলে এরকম নানা মজার তথ্য টুকে আনতে পারবেন।
৮. ট্রন্ডহাইমঃ
বলিউডের নানা গানের মধ্যে দেখে থাকবেন সারিসারি বিভিন্ন রঙ এর বাড়ি যতদূর দৃষ্টি যায়। ট্রন্ডহাইম এরকম ই একটি জায়গা। রঙ বেরঙের সারিসারি বাড়িতে স্মঋদ্ধ এই শহর। আজকালের যে লাইভ মিউজিক ক্যাফে দেখে থাকেন তার উৎস ও এই শহর। আপনার মনে রোমান্টিক হাওয়া বইয়ে দেবে এই শহরের দৃশ্য। ট্রনডেলাগ প্রদেশের ঐতিহ্যবাহী স্থানীয় খাবারের স্বাদ নেয়ার জন্য পাবেন প্রচুর ক্যাফে ও রেস্তোরাঁ আশে পাশে।
৯. স্ট্যাভ্যানজারঃ
প্রাকৃতিক উচ্চতার শহর হিসেবে খ্যাত এই শহরটি। সমুদ্র তীরবর্তী এই শহর প্রায় ৫০ বছর ধরে নরওয়ের জ্বালানি তেলের যোগান দিয়ে আসছে। হাইকিং এর জন্য বেশ পরিচিত এই শহর টি। নানা রঙের ভবন অবশ্য এখানেও পেতে পারেন। এখানে লাইফিওর্ড এবং প্রাইকেস্টোলেন নামের দুটো বেশ নাম করা মালভূমি আছে। সময় নিয়ে সেগুলো ঘুরেও আসতে পারেন।
১০. নরডকেপঃ
এ এক অনন্য সুন্দর জায়গা। একেবারে মাঝরাতে যদি সূর্য দেখতে পারতেন তাহলে কি রকম অবাক হতেন ভাবুন তো? হাতের ঘরিতে রাত তিনটে, অথচ আকাশে চকচকে সূর্যের আলো! হ্যা এমন টাই সম্ভব নরওয়ের নরডেকপে। বছরের ১৮ মে থেকে ২৯ জুলাই এখানে সূর্য অস্ত যায় না কখনোই। আরো মজার ব্যাপার হলো আর্কটিক মহাসাগর থেকে এটি প্রায় ১০০০ ফুট উপরে অবস্থিত। ফলে এখানে যদি আরোহণ করতে পারেন তাহলে পৃথিবীর শীর্ষে আরোহণ করার অভিজ্ঞতা পেয়ে যাবেন প্রায়। প্রতি বছরই প্রায় ২ লক্ষের বেশি অভিযাত্রী এখানে এসে থাকেন। এটি ইউরোপের এমন একটি কেন্দ্র যেখানে আন্তর্জাতিক সড়কের মিলনস্থল।
অপরূপ সৌন্দর্যের এই দেশ ভ্রমণে তাই আর দেরী কেন? ঝটপট তৈরি হয়ে যান নরওয়ের উদ্দেশ্যে। আপনার জন্য অনেক শুভকামনা।
নরওয়ে সহ ইউরোপের যেকোনো দেশে ভ্রমনের জন্য টিকেট এবং প্যাকেজ সংক্রান্ত যেকোনো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন অবকাশের সাথে।